ঢাকা,শনিবার, ১৮ মে ২০২৪

বন, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নানা উদ্যোগ

চকরিয়ার বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে হাতে-কলমে ১০ দিনের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া ::  দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের বনাঞ্চলে একের পর এক বন্য হাতিসহ বিভিন্ন বন্য প্রাণী হত্যার ঘটনা রোধে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তর। বন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষাসহ বনের প্রাণীগুলোকে নিরাপদ আবাসস্থল ফিরিয়ে দিতে নতুন করে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বন্য হাতি হত্যা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে সংশ্লিষ্টদের এই উদ্যোগ ইতোমধ্যে প্রশংসা কুঁড়িয়েছে।

উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্রতিটি বনবিটে, বিশেষ করে যেসব এলাকায় বন্য হাতির আবাসস্থল ও করিডোর রয়েছে তা সংরক্ষণ এবং বন্য হাতি লোকালয়ে নেমে আসলে ফের বনের মধ্যে কিভাবে ঢুকিয়ে দেওয়া যায় তার ওপর মহড়াসহ বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে এলিফেন্ট রেসপন্স টিমসহ (ইআরটি) সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে। এছাড়াও বন, বনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নেওয়া হয়েছে প্রশিক্ষণসহ নানা উদ্যোগ।

গত ৭ ডিসেম্বর থেকে দশদিনের স্বল্পমেয়াদী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে। এই প্রশিক্ষণে শিক্ষক, সাংবাদিক, ফরেষ্টার, জনপ্রতিনিধি, ইআরটি সদস্য, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিমসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৩০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও আবাসস্থল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা, সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিমালা বিষয়ক এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় একেবারে সরজমিন এবং হাতেকলমে।

প্রশিক্ষণ শুরুর দিন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ চট্টগ্রামের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাছের মোহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজ। এদিন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক উপ-বনসংরক্ষক ড. তপন কুমার দে।

পার্কের সহকারি তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম চৌধুরীর সঞ্চালনায় প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দশদিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীরা লব্ধ করতে পারে বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী পরিচিতি, ব্যবস্থাপনার কৌশল। বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষক ক্লাস নেন প্রতিদিন।

তন্মধ্যে ছিল হাতি সম্পর্কে ধারণা, বিস্তৃতি, আবাসস্থল, করিডোর, হাতির বর্তমান অবস্থা, হাতি-মানুষের দ্বন্ধ, দ্বন্ধের কারণ, দ্বন্ধ নিরসনে ইআরটি সদস্যদের ভূমিকা। সাপের প্রজাতি পরিচিতি, বিষধর ও নির্বিষ সাপ চেনা, দংশন, প্রতিকার ও চিকিৎসা। বন্যপ্রাণীর অবৈধ বাণিজ্যরোধে দেহের বিভিন্ন অংশ শনাক্তকরণ, বন্যপ্রাণীর বর্তমান অবস্থা, লাল তালিকা, সংরক্ষণের গুরুত্ব ও গৃহীত পদক্ষেপ। বাংলাদেশের তিমি, হাঙ্গর, রে ফিস শনাক্তকরণ ও সংরক্ষণ, অবৈধ বাণিজ্য, অপরাধের ধরণ ও পাচারের রুট। বাংলাদেশের ডলফিন, সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা ও গৃহীত পদক্ষেপ। পরিযায়ী পাখি কি? পরিযায়ী পাখি সংরক্ষণে বর্তমান অবস্থা, অপরাধের ধরণ ও শাস্তির বিধান। সাইটিস কি এবং তালিকাভুক্ত বন্যপ্রাণীসমূহ, সাইটিস পারমিট কিভাবে ইস্যু হয়। ক্রাইম সিন ইনভেস্টিগেশন বিষয়ে সম্যক ধারণা। বাংলাদেশের বনভূমি, বনের শ্রেণীবিন্যাস ও বর্ণনা, বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২, বিভিন্ন ধারা, জান-মালের ক্ষতিপূরণ নীতিমালা। পোষাপাখি বিধিমালা। অপরাধ উদঘাটনে তথ্য প্রদানকারীকে পুরস্কার প্রদান বিধিমালা। ইকোট্যুরিজম কি?, ইকোট্যুরিজমের উন্নয়নের ক্ষেত্রসমূহ ও সাফল্যের সম্ভাবনা ও করণীয়। বন ও বন্যপ্রাণী আইনের আলোকে মামলা দায়ের পদ্ধতি। বন্যপ্রাণীর রোগ ও প্রাথমিক চিকিৎসাসহ পাখি পরিচিতি। বন্যপ্রাণী অপরাধ, আর্ন্তজাতিক চিত্র, ব্যবসার ধরণ ও প্রতিকারের উপায়। অনুসন্ধান ও গোপন তথ্য সংগ্রহ। কুমারি, ইয়াংছা, রিংভং এলাকায় হাতির করিডোর পরিদর্শন। কক্সবাজার ফিশারী ঘাট পরিদর্শন। রক্ষিত এলাকা কি? বাংলাদেশের রক্ষিত এলাকাসমূহ এবং রক্ষিত এলাকার ব্যবস্থাপনা বিধিমালা, সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়-দায়িত্ব ও কার্যক্রম বিষয়ের উপর হাতেকলমে সম্যক ধারণা দেওয়া হয় প্রশিক্ষণার্থীদের।

প্রশিক্ষণের সমাপনী দিনে নেওয়া হয় দশদিন ধরে চলা প্রশিক্ষণের বিষয়ের উপর লিখিত পরীক্ষা। পরীক্ষায় ভাল ফলাফলের ভিত্তিতে দেওয়া হয় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীকে পুরস্কার। এছাড়াও কুইজে উত্তীর্ণদের পুরস্কারসহ প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া সবাইকে দেওয়া হয় সার্টিফিকেট। সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ও প্রধান অতিথি ছিলেন যথাক্রমে বিভাগীয় বনকর্মকর্তা আবু নাছের মোহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজ এবং কাপ্তাইয়ের বন উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরিচালক বখতিয়ার নূর সিদ্দিকী।

 

পাঠকের মতামত: